আব্বাসীয় খিলাফতের সূচনা হয় উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর থেকে। ইসলামী খিলাফতগুলোর মধ্যে তৃতীয় খিলাফত শাসিত হয় আব্বাসীয় বংশ কর্তৃক। এই খিলাফতের রাজধানী ছিল বাগদাদে। আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয় উমাইয়া খিলাফতকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর। ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবদীপ্ত অধ্যায় ছিলো আব্বাসীয় খিলাফত।
আব্বাসীয় খিলাফত নবী মুহাম্মদ (স.) এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর আবুল আব্বাস আস-সাফফার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে কুফায়। আবু জাফর আল মনসুর ছিলো দ্বিতীয় খলিফা।আল মনসুরকে আব্বাসীয় খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তবে হারুন অর-রশীদ ও আল-মামুনের মত শ্রেষ্ঠ খলীফাদের মাধ্যমে ইতিহাসে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আব্বাসীয় বংশের প্রথম রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয় হাশিমিয়ায়। বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয় ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে। আব্বাসীয় খিলাফতের নামকরণ হয় মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু আল আব্বাস এর নামানুসারে।
মুসলিম সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশে আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাস এক অনন্য সৃষ্টি। ইসলামী কৃষ্টি, সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক যুগ ছিলো আব্বাসীয় খিলাফত। এই খিলাফতে সর্বমোট ৩৭ জন খলীফা খিলাফত পরিচালনা করেছিলেন।
এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে একক আধিপত্যের যুগ ছিলো উমাইয়া খিলাফতকাল। একটি নির্দিষ্ট সময়ে মুসলিম খিলাফত ৩টি ভাগে ভাগ হয়ে যায় আব্বাসীয় শাসনকালে। বাগদাদ কেন্দ্রিক আব্বাসীয় খিলাফত, মিসরের কায়রোয়ান কেন্দ্রিক ফাতিমীয় (শিয়া) খিলাফত ও স্পেনের কর্ডোভা কেন্দ্রিক বিচ্ছিন্ন উমাইয়া খিলাফত।
এছাড়া এই বংশের শেষ দিকে দুর্বল সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তির কারণে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উদ্ভব ছিলো শাসনামলের একটি গুণগত বৈশিষ্ট্য। এই শাসনামলে আরব অনারব নিয়ে কোনোপ্রকার দ্বন্দ্ব ছিল না। একক আরবীয় জাতীয়তাবাদের স্থলে বিশ্বজনীন মুসলিম শাসনের বিকাশ ঘটেছিলো। ফলে কেন্দ্রীয় শাসনে খলীফার পর উযির পদ্ধতির প্রথম সূচনা হয়েছে এই আব্বাসীয় খিলাফতের সময়েই। যা পরবর্তী সকল মুসলিম খিলাফত কিংবা আব্বাসীয়দের সালতানাতে বহাল ছিলো।
আব্বাসীয় খিলাফতের সময় মুসলিম সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিলো বাগদাদ। একদিকে যেমন ছিলো ইসলামী ভূখন্ড বৃদ্ধির মনোভাব তেমনি তার চেয়ে বেশি ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিতি। এই সময় মুসলিমরাই তখন পৌছায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম শিখরে। তৎকালীন ইউরোপীয়ানরা পুরোপুরিভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে দুরে ছিলো। পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী শাসনকালের ইতিহাস গড়ে ৫০৮ বছর শাসন করে আব্বাসীয় খিলাফত।
উমাইয়া আমলে অনারবদের প্রতি সামাজিক অসাম্যের ফলে সৃষ্ট অসন্তোষের মাধ্যমে আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় এলে সাম্রাজ্য দ্রুত আরব পরিচয় ধারণ করে। আরবি ভাষায় জ্ঞান আদান প্রদান করা হত সাম্রাজ্য জুড়ে। বিভিন্ন জাতির লোকেরাও তখন তাদের দৈনন্দিক জীবনে আরবি বলা শুরু করেছিলো। অন্য ভাষা থেকে রচনা অনুবাদ করা হতো আরবীতে। একটি নতুন ইসলামি পরিচয় জন্মলাভ করে পূর্ব সময়ের আরব সংস্কৃতির সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এই সময়ে। ইউরোপীয়দের জন্য বিস্ময়কর ছিল এই সংস্কৃতি।
অবশেষে ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোল নেতা হালাকু খান কর্তৃক বর্বরোচিত আক্রমণে সর্বশেষ খলীফা আল মুসতাসিম বিল্লাহর শহীদের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে আব্বাসীয় খিলাফতের।