বিপ অ্যাপ কি
সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ নতুন ব্যবহার নীতি চালু করেছে যেখানে ব্যবহারকারীর তথ্য তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ার করা যাবে। ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যবহারকারীরা এই গোপনীয় নীতি চুক্তি সই না করলে তাদের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে এবং কোনো তথ্য ফেরত দেওয়া হবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং আমেরিকা ছাড়া প্রায় দেড়শ দেশে এই নতুন নীতি প্রয়োগ করা হবে। তুর্কি অ্যাপ বিপ (BiP)। হোয়াটসঅ্যাপ এ নতুন নীতির বিরুদ্ধে তুরস্কের জনগণ ও সরকার সোচ্চার হয়ে হোয়াটসঅ্যাপ বয়কটের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণও তাদেরকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। তবে প্রশ্ন ওঠে বিপ অ্যাপ কতোটা নিরাপত্তা বজায় রাখে?
তুরস্কের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ মুসলমান কাগজে কলমে। আর বিপ পুরোপুরি তুর্কি প্রকৌশলীদের তৈরি একটি অ্যাপ হিসেবে মুসলমানদের অ্যাপই বলা যায়। কিন্তু ইসলামী মূল্যবোধ ও ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে বুঝানো হলে বিপ অ্যাপের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং ব্যক্তিবর্গ কতটুকু ইসলামিক তা প্রশ্নবিদ্ধ।
বিপ অ্যাপ কি নিরাপদ?
বিপ অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার উপর নিশ্চয়তা দেয় বলে জানিয়েছে। বিপ অ্যাপটিতে প্রেরক নিজে তার বার্তার সময়কাল নির্ধারণ করতে পারে এবং বার্তা প্রাপকের দেখার একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সেটি ডিলিট হয়ে যায়। বিপ অ্যাপ এর এই দিকটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।ইমারজেন্সি অপশন তুর্কি অ্যাপটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এটি ব্যবহারকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং আরও দশটি পরিষেবার সুযোগ করে দিতে সক্ষম।অ্যাপটিতে ভাব আদান-প্রদানের সময় ১০৬ টি ভাষায় অনুবাদের সুবিধাও রয়েছে, যা ভাষা না জানা প্রাপককেও কথা বুঝতে সহায়তা করবে।
টার্কসেল-এর জেনারেল ম্যানেজার মুরাত এরকান জানান, ব্যবহারকারীরা 'গোপনীয়তার স্বর্গ' হিসেবে বিবেচনা করছেন বিপ অ্যাপকে। তিনি আরো বলেন, ব্যবহারকারীদের তথ্যগুলো এনক্রিপটেড ভল্ট-এ রাখা হয় বলে শুধু ব্যবহারকারীরাই এটি খুলতে পারে এবং কর্তৃপক্ষও তা দেখতে পারেনা।
অ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে এক্সেস থাকার ফলে যেকোনো সময় ব্যবহারকারীর তথ্য দেখা ও ব্যবহার করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের। তাই টার্কসেলের ম্যানেজারের গোপনীয়তা নীতি সম্বন্ধীয় দাবীর প্রেক্ষিতে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অনেকে।ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে অ্যাপটির মার্কেটিং করা হলেও এখনও পর্যন্ত অ্যাপটি নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত নয় এখনো পর্যন্ত।
বিপ অ্যাপ এর মালিক কে
(BIP) "বিপ" তুরষ্কের রাষ্ট্রীয় টেলিকম সংস্থা টার্কসেলের অ্যাপ। ২০১৩ সালে এই অ্যাপ চালু করে তুরস্কের সবচেয়ে বড় টেলিকম সংস্থা টার্কসেল। ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা কামিয়েছে অনেক। বিপ (BiP) প্রথম চালু হয় ২০১৩ সালের নভেম্বরে।গত ৭ বছরে সাড়ে চার কোটি গ্রাহক ডাউনলোড করেছে অ্যাপটি এবং গত কয়েক সপ্তাহে ডাউনলোড হয়েছে প্রায় এক কোটি। ১৬৬ দেশ থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করেছে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৬ লাখ মানুষ। ২০১৭ সালে মোট ব্যবহারকারী হয় ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এই সংখ্যা ৩ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছে।
সারা বিশ্বে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিপ ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৫০লাখ। বিশ্বের ১৯৬ দেশে বিপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়েছে ২০২১ এর জানুয়ারিতে এসে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক লাইট-এর মতো অ্যাপকে পেছনে ফেলে তালিকার প্রথমে তুরস্কের মেসেজিং অ্যাপ বিপ।
পুরো বিশ্বে হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি। এদিকে বিপ অ্যাপ মাত্র আগামী কিছুদিনের মধ্যে ১০ কোটি পূর্ণ করবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে বিপ অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের ধারেকাছেও নেই। স্মার্টফোন এর জন্য মেসেজিং অ্যাপ এর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে টেলিগ্রাম। প্রাইভেসি ও স্পিড ফোকাসড মেসেজিং ও কলিং অ্যাপ টেলিগ্রাম, মোবাইল ও ডেস্কটপ উভয় মাধ্যমেই ব্যবহার করা যায় টেলিগ্রাম। ধর্মীয় অনুভূতিতে নয়,এখনো পর্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষায় জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করে আছে রাশিয়ান মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম।