আপনি কি জানেন, ইনফ্লুয়েন্সার মানে কি?
যদি মনে করে থাকেন যে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া খুবই সহজ, যা করতে হবে তা হলো স্যুট টাই পড়ে পোজ দেওয়া এবং কয়েকটা ছবি তুলে সোশ্যাল সিকিং নেয়া। ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। ইনফ্লুয়েন্সার সম্পর্কে কিছু জানতে হলে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পুরো লেখাটি পড়ুন।
ইনফ্লুয়েন্সার কী?
ইনফ্লুয়েন্সার হলো এমন একজন ব্যক্তি যার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সেখানে প্রচুর ফলোয়ার বা ফ্যানবেজ আছে, যার চাহিদা রয়েছে এবং স্বনামধন্য মানুষ হিসেবে পরিচিত, সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেন, তিনিই একজন ইনফ্লুয়েন্সার। ইনফ্লুয়েন্সার যা করেন তা 'ভালো' হিসেবে উপস্থাপন করেন, এবং ফলোয়াররা বিশ্বাস করে নেয় যে এটা ভালো, এটা গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে অবশ্যই তার কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্বস্ততা অর্জন করে নিতে হবে।
ইনফ্লুয়েন্স প্রতিশব্দ -
বাংলায় ইনফ্লুয়েন্স মানে হলো প্রভাবিত করা।
বাংলায় ইনফ্লুয়েন্সার মানে প্রভাবক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি।
Influence meaning in Bengali is প্রভাবিত করা
Influencer meaning in Bengali is প্রভাবক, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব
একজন ইনফ্লুয়েন্সার বিভিন্নভাবে তার ফলোয়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন, আর ঠিক এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পণ্য বা প্রকল্পের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেন। মানুষ সেটা বিশ্বস্ততার সাথেই গ্রহণ করে থাকে।
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং মানে কি?
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি মাধ্যম, যেখানে ব্যক্তিগত ও পেশাগত পরিচিতি কাজে লাগিয়ে বিশাল সংখ্যক একটা মানুষকে প্রভাবিত করা যায়। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং ব্যবহার করা হয় এবং এই মার্কেটিংয়ে সফলতা লাভের সুযোগ অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে আমরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান কিংবা মিজানুর রহমান আজহারি কে বেছে নিতে পারি, এই দুজন মানুষ যখন তাদের তাদের সোশ্যাল একাউন্ট থেকে তাদের প্রভাবক বিষয়ের কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেন, ভালো দিক তুলে ধরেন কিংবা ব্যবহার করতে বলেন তখন অনেক মানুষ তাদের কথাকে গুরত্ব দিয়ে গ্রহণ করবে। ঠিক এখানেই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের সফলতা।
ডিসিয়াই নামের একটি কোম্পানি ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছে, এক নজরে দেখে নেয়া যাক:
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং এর ব্যবহার
১। ছোটখাটো ইনফ্লুয়েন্সারদের উপর বর্তমানে আকর্ষণ বেশি কাজ করে।
২। গল্প বলার মধ্য দিয়ে যদি ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং করা হয় তাহলে সেটা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়।
৩। একাধিক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ইনফ্লুয়েন্স করলে ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায়।
৪। ভিডিও ইনফ্লুয়েন্স ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বর্তমান ডিজিটাল সময়ে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং কোন একটি কোম্পানির সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। যে কোনো ধরণের প্রচার প্রচারণার জন্য ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে অন্যান্য মার্কেটিং উপায় থেকে এই মার্কেটিং থেকে বেশি সফলতা পাওয়া সম্ভব।
অবাক করার মতো তথ্য হলো বিগত কিছু বছরে “ ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং ” কথাটি লিখে গুগুল সার্চ দেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, বর্তমান সময়ে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং কতটা জনপ্রিয় একটি উপায় হিসেবে গুরত্ব পাচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে সময়ের সাথে ব্যবসায় এগিয়ে নিতে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং অন্যতম একটি উপায় হয়ে দাড়িয়েছে।
এক্সপার্ট ডিজিটাল মার্কেটারদের মতে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং
একজন বড় আকারের ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারের মাধ্যমে পণ্য অথবা কোম্পানির প্রচার না করে বরং অনেকগুলো ছোট ছোট ইনফুয়েন্স মার্কেটারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করালে সেখান থেকে বেশি ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তাই বর্তমানে বড় বড় কোম্পানিগুলো নিজেদের প্রচার প্রসারণের জন্য এই পন্থায় অবলম্বন করছেন, সেটার বাস্তব উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ছোট ছোট ইউটিউবার কিংবা ব্লগারদের মধ্যে।
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিংয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করে আছে এই ছোট ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটাররা।
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের ফ্যান ফলোয়ারের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নামকরণ করা হয় -
>> ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সার : ফ্যান ফলোয়ার এক হাজার থেকে দশ হাজার পর্যন্ত।
>> মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার : ফ্যান ফলোয়ার দশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত।
>> মিড-টায়ার ইনফ্লুয়েন্সার : ফ্যান ফলোয়ার পঞ্চাশ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত।
>> ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সার : ফ্যান ফলোয়ার পাঁচ লাখ থেকে দশ লাখ পর্যন্ত।
>> মেগা ইনফ্লুয়েন্সার: ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি।
যে সকল ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে দশ হাজারের মধ্যে তাদের মাধ্যমেই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করলেই বেশি সুফল পাওয়া যায় বর্তমানে।
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং এ গল্পে গল্পে বিজ্ঞাপন
বর্তমান সময়ে যে ট্রেন্ডটি সবচাইতে বেশি পরিচিত এবং যা থেকে ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায় তা হলো গল্পের আদলে বিজ্ঞাপন। এজন্য যে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত তা হলো গল্প এবং গল্প বলার ভঙ্গী উভয়ই এমন ভাষায় করতে হবে যাতে সেটা খুব সহজে ফ্যান ফলোয়াররা বুঝতে পারে। এই ধরণের গল্পের মধ্যে যদি সামাজিক আবেগ মেশানো যায় তাহলে সেই বিজ্ঞাপনে সফলতার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বর্তমানে ৯২ শতাংশ ব্র্যান্ড ই গল্পের মাধ্যমে নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে অত্যাধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
একাধিক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং
মাথায় রাখা উচিত - ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম অথবা টুইটার সবগুলো প্ল্যাটফর্মের একটি আলাদা ও নিজস্ব ভাব-ভঙ্গী রয়েছে এবং তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে সেখান থেকে অনেক ভাল পরিমাণে ফ্যান ফলোয়ার পাওয়া সম্ভব। তাই সাম্প্রতিক দক্ষ ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটাররা শুধুমাত্র একটি প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেদেরকে আরো বেশি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার শুরু করেছে। ইউটিউব এবং ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামেই নতুন ইনফ্লুয়েন্সারদের সংখ্যা বেশি, ট্রেন্ডে গা ভাসাতে এই পথ খুবই কার্যকরী। সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক এর মতো প্লাটফর্মও ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিংয়ের বড় একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
ভিডিও কনটেন্টে ইনফ্লুয়েন্স বেশি হয়
সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, অন্যান্য কন্টেন্ট থেকে ভিডিও কন্টেন্টগুলোতে মানুষের আগ্রহ বেশি। এমনকি লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের সংখ্যাও ভিডিওতে তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্পেতি অনেক লাইভ ভিডিও করছে এবং এই ধরণের লাইভ ভিডিওতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে। এই ধরণের লাইভ ভিডিওগুলোর প্রতিও ভোক্তাদের আগ্রহেরও কোন কমতি থাকে না।
কন্টেন্টের মধ্যে মোশন-গ্রাফিক্স এবং ভালো সিনেমাটোগ্রাফি দিয়ে কাজ করে ভিডিও তৈরি করলে সেই ভিডিওর প্রতি মানুষের আকর্ষণ সাধারণ ভিডিওর তুলনায় অনেক বেশি হয়। বর্তমান সময়ে ভিডিও কন্টেন্ট দিয়ে ১৩৫ শতাংশেরও বেশি সফলতা পাওয়া সম্ভব। ছবি অথবা লেখা কন্টেন্টের চেয়ে ভিডিওর প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। এছাড়া বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ব্যবহারকারীরা অন্যান্য কন্টেন্টের তুলনায় ভিডিও কন্টেন্টে সময় বেশি দেয়। বর্তমান ও ভবিষ্যত ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং একটি সফল মার্কেটিং স্ট্যাটেজির উদাহরণ হয়ে থাকবে।